২১ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৩৫ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
অনলাইন ডেস্ক
মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শাহ গোলাম নবী স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে ১০০টি মাস্ক ও ২০০টি গগলস চেয়ে চিঠি পাঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে মাত্র ২৫টি মাস্ক ও ২৫টি গগলস দেওয়া হয়। একইভাবে রংপুর মেডিকেল কলেজের চাহিদাপত্রের বিপরীতে পিসিআর ল্যাবে কর্মরতদের জন্য দেওয়া হয় মাত্র ১০০ পিস মাস্ক ও ১০০ পিস পিপিই। অথচ একই দিনে জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল চৌধুরী ১২০০ পিপিই, ১২০০ গগলস, ১২০০ জুতার কাভার, ৩ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক ও ৩ হাজার সার্জিক্যাল গ্লাভস চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি লেখেন।
জেকেজির চাহিদার পুরোটাই পূরণ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত মার্চ ও এপ্রিলের দিকে যখন সরকারি সুরক্ষাসামগ্রীর চরম সংকট চলছিল, তখন চাহিদাপত্র দিয়েও অনেক কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রয়োজন অনুযায়ী সুরক্ষাসামগ্রী পায়নি। তবে সাবরিনা-আরিফেরর জেকেজি চাহিদাপত্র দেওয়ামাত্র শত শত সুরক্ষাসামগ্রী পৌঁছে যেত। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠান জেকেজিকে নমুনা সংগ্রহের অনুমোদন দেওয়া এবং সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে জেকেজি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১০ জনের একটি সিন্ডিকেট। তাদের মধ্যে চারজন গ্রেফতার হয়েছেন। বাকিরা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী।
তারা নজরদারিতে রয়েছেন। এদিকে জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনাকে ফের দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তিন দিন রিমান্ড শেষে গতকাল আদালতে হাজিরের পর প্রতারণা মামলায় আবারও পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এদিকে চার দিনের রিমান্ডে থাকা আরিফ চৌধুরীকে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের সূত্র জানায়, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের কাজ পাওয়া জেকেজিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। পুলিশের জেরায় সাবরিনা এরই মধ্যে নিজের দোষ স্বীকারও করেছেন এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও গ্রেফতারের দাবি করেন।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকর্তাদের সাবরিনা বলেন, করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ তৈরি করতে আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি এটা চাইনি। এখন ভুল বুঝতে পারছি, কিন্তু দেরি হয়ে গেছে
আমাকে যারা এ কাজে সহযোগিতা করেছে তারাও সমান অপরাধী। তাদেরও গ্রেফতার করা হোক।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদফতরে প্রভাব খাটিয়ে স্বামী আরিফুল চৌধুরীর জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা তথা জেকেজি হেলথকেয়ারকে সরকারি কাজ পাইয়ে দিতেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী। ফলশ্রুতিতে করোনার এ দুর্যোগকালে জেকেজি হেলথকেয়ার প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। সূত্র জানায়, সরকারের কাছ থেকে বিনা মূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে কী পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে তার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব টাকা কোথায় কোথায় রেখেছেন তারও খোঁজ মিলেছে। টাকার বেশির ভাগ অংশ তারা তিনটি ব্যাংকে রাখার তথ্য দিয়েছে। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে সাবরিনা এবং আরিফের মোবাইল কল লিস্ট ধরে তদন্ত করা হচ্ছে। সাবরিনাকে গ্রেফতারের পরই তার মোবাইলফোনটি জব্দ করা হয়েছে। এর সূত্র ধরেই করোনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে অনেক প্রভাবশালী লোকজন তাকে এ অপকর্মে সহযোগিতা করেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ডা. সাবরিনার ঘনিষ্ঠ ওভাল গ্রুপের আরও সাত পরিচালককে পুলিশ নজরদারিতে রেখেছে। এই সাতজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জানিয়েছেন ডিবি কর্মকর্তারা। তারা বলছেন- তদন্ত করে দেখা হবে, এই জালিয়াতির সঙ্গে আর কারা জড়িত। ওভাল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ওভাল কমিউনিকেশন লিমিটেড, ওভাল সিকিউরিটি প্রাইভেট লিমিটেড, ওভাল ফ্যাশনস লিমিটেড, ওভাল অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেড ও ওভাল করপোরেশন এবং জেকেজি। সারা বছর স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড সরবরাহও করত ওভাল গ্রুপ।